রাত সাড়ে তিনটায় শাহবাগের জমায়েতে হাসনাত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারির পর আনন্দমিছিল,
নিউজ, দৈনিক আমাদের দেশের খবর,
১১ মে ২০২৫,
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় রাজধানীর শাহবাগের জমায়েতে বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় রাজধানীর শাহবাগের জমায়েতে বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সোমবার সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর আনন্দমিছিল করা হবে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় রাজধানীর শাহবাগের জমায়েতে এ ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, এ সময় তাঁরা সরকারের কাজের দিকে নজর রাখবেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করে সবাইকে যাঁর যাঁর বাসায় চলে যেতে বলেন। তাঁর বক্তব্যের সময় এনসিপির অন্য নেতাদের পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চ প্রভৃতি সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
হাসনাত তাঁর বক্তব্যের শুরুর দিকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে আমরা বিভিন্ন টালবাহানা দেখতে পাচ্ছিলাম। আমরা দেখছিলাম, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যারা গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত, এই আওয়ামী লীগকে বিভিন্নভাবে সেফ এক্সিটের (দেশ থেকে নিরাপদে চলে যাওয়ার) ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছিল। তার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে সুবিধাভোগী রাষ্ট্রপতিকেও (সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ) সেফ এক্সিট দেওয়া হয়েছে। অথচ যেখানে জুলাই অভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছে, শহীদ পরিবার রয়েছে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এত দিন ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের কোনো বিধান ছিল না। এ বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলো ইতিবাচক। তবে এতটুকুই যথেষ্ট নয়বিগত সময় জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার টালবাহানা করেছে বলেও উল্লেখ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আওয়ামী গণহত্যাকারীদের বিচারের দীর্ঘসূত্রতা দেখা গেছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা গণহত্যা, গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, ….গণহত্যার পর যেখানে খুনি লীগের বিচার দ্রুত হওয়ার কথা ছিল, সেখানে দেখা গেছে জুলাই বিপ্লবী আহত অনেক যোদ্ধার মামলা নিচ্ছে না বিভিন্ন থানা।
হাসনাত অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে তৃণমূলে এমনকি রাজধানী শহরেও জুলাই যোদ্ধারা আওয়ামী গণহত্যাকারীদের হামলার শিকার হচ্ছেন। বিগত দেড় দশকে বিচার বিভাগে স্বজনপ্রীতি ও দলীয় আনুগত্যের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে কারণে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা প্রকৃত বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
হাসনাত বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন ও জারি করতে সরকার ৩০ কার্যদিবস সময় চেয়েছে। ইতিপূর্বেও ঘোষণাপত্র প্রণয়নের কথা বলে সরকার টালবাহানা করেছে। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। আগামী ৩০ দিন তাঁরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন।
হাসনাত তাঁর বক্তব্যের শেষের দিকে বলেন, ‘আগামীকাল সরকারি বন্ধ (আজ রোববার)। আমাদের বলা হয়েছে পরশু দিন সোমবার সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সোমবার আমরা প্রজ্ঞাপন নিয়ে আনন্দমিছিল করব।’
কোনো স্বৈরাচারী শক্তিকে বরদাশত করা হবে না
এর আগে শনিবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে শাহবাগে আসেন হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক। সেখানে তিনি বলেন, ‘কোনো ক্ষমতাসীন মহল চাইলেও ছাত্র-জনতা ভবিষ্যতে কোনো দিন কোনো স্বৈরাচারী শক্তিকে বাংলার রাজনীতিতে বরদাশত করবে না।’
মামুনুল হক আরও বলেন, ‘এ দেশের মানুষের মনে শঙ্কা ছিল আবার ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার কোনো অপতৎপরতা হচ্ছে কি না। শহীদদের রক্তের দাগ এখনো মুছে যায়নি। শহীদের মায়ের অশ্রু পেছনে ফেলে বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার মতো ল্যাসপেন্সারদের রাজনীতি করার খায়েশ কোনো দিন পূরণ হতে পারে না।’