অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে ফের পটবদল আসন্ন?
দৈনিক আমাদের দেশের খবর, নিউজ, বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ সাহজাদা কায়সার , ৩০মে ২০২৫, সঠিক তথ্যের অনুসন্ধানের সঠিক নিউজ দেখুন,
সমৃদ্ধ দত্ত: আজ ২০২৫ সালের মে মাসে এসে সেই বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের যাঁরা সমর্থক ছিলেন, তাঁদের মনোভাবটা ঠিক কী? আজ তাঁরা বুঝতে পারছেন যে, কতটা বড় বিপজ্জনক একটি কাজকে তাঁরা সমর্থন করেছিলেন? বাংলাদেশে গণতন্ত্র এসেছে? শান্তি এসেছে? ১০ মাস কেটে গিয়েছে। কোনও নির্বাচিত সরকার আছে? অন্তর্বর্তী সরকার নামক যে শাসক গোষ্ঠী বাংলাদেশ চালাচ্ছে তারা যে চরম ব্যর্থ সেটা তো ১০ মাসেই প্রমাণিত। সবথেকে বড় ব্যর্থ এবং বুদ্ধিমান প্রশাসকের নাম কি? মহম্মদ ইউনুস। বুদ্ধিমান কেন? কারণ তিনি এই ১০ মাসে কী কী করেছেন? নিজের তাবৎ কোম্পানির মুনাফা করিয়ে দিয়েছেন। নিজের সংস্থা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ৬৬৬ কোটি টাকা সুদ মকুব করে দিয়েছেন। নিজের ব্র্যান্ড গ্রামীণ ফোনের ৪ হাজার কোটি টাকা পাওনা মকুব করে দিয়েছেন। গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে স্টার লিংকের চুক্তি করিয়ে নিয়েছেন। ‘গ্রামীণ’ নামের বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত হয়েছে, গ্রামীণ ট্রাস্ট তৈরি হয়েছে, গ্রামীণ মেডিকেল কলেজ, গ্রামীণ ম্যানপাওয়ার সংস্থা। অর্থাৎ বাংলাদেশজুড়ে তাঁর কোম্পানি ‘গ্রামীণ’ ব্র্যান্ড ডালপালা ছড়িয়ে দিয়েছে। আর যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সমর্থক ছিল তাদের একে একে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া চলছে।
যে ছাত্ররা হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের মুখ ছিলেন তাঁদের সিংহভাগ সরকারের উপদেষ্টা হয়ে গিয়েছেন। এবং এই ১০ মাসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি। বাংলাদেশে এখন সবথেকে বড় চর্চা এবং ক্ষোভ হল, এই ছাত্রদের আচার, আচরণ, ঔদ্ধত্য এবং সম্পদ লাফ দিয়ে বাড়ছে। একজন ছাত্রনেতা চেয়ারে বসেই ১৫৫ টি গাড়ির কনভয় নিয়ে নিজের গ্রামের বাড়ি গিয়েছিল।
বঙ্গীয় বাবুসমাজ দূরের বিপ্লবে আন্দোলিত হয়। নিজের স্বাভাবিক জীবনযাপনে যাতে কোনও আঁচ না লাগে, তাহলেই হল। বাড়ি থেকে দূরের রাজ্যে অথবা অন্য দেশে কিংবা অন্য নিরাপদ দূরত্বে হঠাৎ করে সরকার বিরোধী, শাসক বিরোধী আন্দোলন অথবা ধর্মীয় গোষ্ঠীসংঘাত হলেই তৎক্ষণাৎ বঙ্গীয় বাবুসমাজের একাংশ মনে করেন বিপ্লব জাগ্রত দ্বারে। ঠিক এই প্রবণতা থেকেই ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নাম দিয়ে যে পরিকল্পিত চিত্রনাট্যে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল, পশ্চিমবঙ্গীয় বাবুসমাজের একাংশ সেই আন্দোলনকে দু হাত তুলে অন্তর থেকে সমর্থন করেছিলেন। আবার অন্য একটি অংশ চরম বিরোধীও ছিলেন। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকারীদের সমর্থকেরা মনে মনে গোপন একটি আকাঙ্ক্ষাও পোষণ করতেন, ‘আহা! আমাদের এখানেও এরকম একটা হলে বেশ হয়!’ আশা করা যায় আজ তাঁরা আরও একবার বুঝতে পারছেন যে, ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনও বিকল্পই নেই। ১৯৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত লাগাতার নিয়ম করে ভোট হয়েছে। এমনকী যিনি একদিন জরুরি অবস্থা জারি করলেন, সেই তিনিই একদিন হঠাৎ নিজেই অবাধ নির্বাচন ঘোষণা করলেন এবং সেই ভোটে নিজে হেরেও গেলেন। এই চমকপ্রদ গণতান্ত্রিক ইতিহাস কোনও দেশেই নেই। সুতরাং ক্ষোভবিক্ষোভ যতই থাকুক, মনে রাখতে হবে নির্বাচনে পরাস্ত করতে হবে প্রতিপক্ষকে। সে জন্য নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশ মডেল নিতে গেলে সেটা হাস্যকর হয়ে যাবে।
আজ পর্যন্ত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ স্থায়ী গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া কিংবা স্বাভাবিকভাবে নির্বাচিত সরকারের নির্দিষ্ট মেয়াদপূরণ এবং আবার ভোট ইত্যাদি ব্যবস্থায় প্রবেশ করতেই পারেনি। সারাক্ষণ যেন এক অস্থিরতা। সেই রীতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই আবার ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এক অস্থিরতা শুরু হয়েছিল। ভারতবন্ধু শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়াই ছিল ওই আন্দোলনের লক্ষ্য। অথচ ভারতবন্ধু শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিয়ে ভারত বিরোধী চক্র এবং চীন-পাকিস্তানের অনুগামী গোষ্ঠী শাসনক্ষমতায় চলে আসার সম্ভাবনায়, দেখা গিয়েছিল বঙ্গীয় বাবুসমাজের একাংশও উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন। কারণটা আজও বোঝা গেল না। আমরা ভারতীয়। আমরা দেখব আমাদের বন্ধু কে। আমাদের বন্ধু হাসিনা। তিনি সরকারের প্রধান হিসেবে থাকলে ভারতের নিরাপত্তাজনিত কোনও শঙ্কা নেই। সাংস্কৃতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক আদানপ্রদানও খুব সুষ্ঠুভাবে হবে। সুতরাং আওয়ামি লিগ প্রশাসনিক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হোক বারংবার। এটাই ভারত চাইবে। যদি আওয়ামি ভারত বিরোধী কোনও কাজ করে বা মনোভাব নেয়, তাহলে তখন ভারত অন্য চিন্তা করতেই পারে। এটাই তো বিদেশনীতির মূল কথা। জাতীয় স্বার্থে থেকে বড় আবেগ তো আর কিছু হতে পারে না।
যে বিএনপি এবং জামাত-ই ইসলামি এই ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল, তারাও এখন সেই ছাত্রদের উপর প্রবল ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। সেনাপ্রধানের সঙ্গে মহম্মদ ইউনুসের সম্পর্ক প্রবল তিক্ত এবং সংঘাতময়। বাংলাদেশ কার্যত ধ্বংসের মুখোমুখি। মহম্মদ ইউনুস এবং তাঁর সঙ্গী উপদেষ্টাদের সরকার চালানোর মতো কোনও যোগ্যতাই নেই। সরকার, প্রশাসন, আইন, বিচারবিভাগ সম্পর্কে তাঁদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তাই গোটা বাংলাদেশ এখন অগ্নিগর্ভ। অরাজকতা কাটছে না।
শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া করে যারা এখন গদিতে বসেছে, তাদের একমাত্র লক্ষ্য হল, বাংলাদেশকে লুটেপুটে নেওয়া। ৪০০ কোটি, ১১১ কোটি ইত্যাদি সব আর্থিক নয়ছয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। জেলায়, উপজেলায় গ্রাম শহরে চলছে সমন্বয়কারীদের চাঁদা আদায়। জনতার নাম করে ১০ মাস ধরে চলছে মব জাস্টিস। মব সন্ত্রাস। কেউ কারও কন্ট্রোলে নেই।
বিএনপি একটি অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল। জামাত-ই ইসলামি দীর্ঘকাল ধরে কাজ করছে। এখন এই দুই প্রধান দলও প্রবল ক্ষুব্ধ ইউনুসের উপর।
প্রায় প্রতিনিয়ত জুলাই আন্দোলনের সেইসব বিপ্লবী ছাত্রনেতা আজকাল বাংলাদেশের সর্বত্র হয় মার
খাচ্ছে অথবা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। প্রথম কিছু মাস আওয়ামি লিগ সমর্থকদের ছিল প্রাণভয়। আওয়ামি লিগ, ছাত্রলিগ সমর্থক হলেই হয় গ্রেপ্তার কিংবা প্রাণনাশ। সেই প্রবণতার বিপুল পরিবর্তন হয়েছে। বেশ কয়েক মাস ধরে এখন আওয়ামি লিগ প্রকাশ্যে মিটিং মিছিল করছে। ছাত্র লিগ সরাসরি সরকার বিরোধিতায় নেমেছে।
সমস্ত মূলস্রোতের রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষ, প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী সংগঠন সকলেই চাইছে নির্বাচন। একটি অনির্বাচিত স্বৈরতান্ত্রিক সরকার কতদিন ধরে বাংলাদেশের শাসক হয়ে থাকবে? এই দাবিতে এখন সকলেই সরব যে নির্বাচন করতে হবে। ইউনুস সরকার জানিয়েছে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত কি অনন্ত অপেক্ষা করবে জনতা অথবা সেনাবাহিনী? নাকি শীঘ্রই বাংলাদেশে আবার একটি অভ্যুত্থান হবে? সেটা জনতার অভ্যুত্থান হতে পারে। আবার সেনা অভ্যুত্থানও হতে পারে।
মহম্মদ ইউনুস এবং তাঁর সঙ্গী ওই ছাত্রনেতার দল, আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করেছে। তারা বাংলাদেশকে আওয়ামি লিগমুক্ত করতে চায়। প্রাথমিকভাবে
জুলাই আন্দোলনে সন্ত্রাস ও জনমত সংঘটিত করে হাসিনাকে দেশছাড়া করতে সফল হয়েছিল এই চক্র। আওয়ামি লিগ নেতা কর্মী সমর্থকরাও হয় পালিয়েছে, অথবা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় কিংবা আত্মগোপন করে।
কিন্তু রাজনীতির এবিসিডি জানা বাংলাদেশবাসী জানে যে, আওয়ামি লিগকে নিশ্চিহ্ন করা অসম্ভব।
২০০১ সালে বাংলাদেশে সবথেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল। সেই ভোটে আওয়ামি লিগ ২ কোটির বেশি ভোট পেয়েছিল। ২৪ বছর পর জনসংখ্যা বেড়েছে। আওয়ামি লিগের একটানা শাসনে বিরোধী যেমন বেড়েছে, আবার সমর্থকও বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশজুড়ে যত প্রতিষ্ঠান, সর্বত্র আওয়ামি লিগের নেতাকর্মীরা ঢুকে বসে আছে এত বছর ধরে। সুতরাং আজও প্রধান দুই দল আওয়ামি লিগ এবং বিএনপি। সুতরাং আওয়ামি লিগ প্রবলভাবে রয়েছে। হিন্দুদের সিংহভাগ আওয়ামি লিগ সমর্থক। বিএনপি, আওয়ামি লিগ, জামাত-ই ইসলামি প্রধান শক্তি থাকবে বালোদেশে। ছাত্রদের দল নির্বাচনের পর বুঝতে পারবে যে মব জাস্টিস আর রাজনীতির সাফল্য এক জিনিস নয়।
বকেয়া বেতন, বেতন বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নির্বাচনের দাবিতে প্রতিদিন ঢাকা থেকে রাজশাহী
কিছু না কিছু সরকার বিরোধী প্রবল বিক্ষোভ চলছে। শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা না থাকা মহম্মদ ইউনুস সম্পূর্ণ দিশাহারা। ইউনুস এবং তাঁর সঙ্গী ওই ছাত্রনেতৃত্বের বিরুদ্ধে জনতার ক্ষোভ আকাশ স্পর্শ করছে ক্রমেই। সুতরাং আজ নয় কাল সরে যেতেই হবে তাঁদের। মনে রাখতে হবে ভারত কিন্তু উপমহাদেশে একটি সর্ববৃহৎ শক্তি!
হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে যারা একাত্তরের ইতিহাস মুছে ফেলতে উদ্যত, পাকিস্তানকে বন্ধু হিসেবে আলিঙ্গন করতে মরিয়া, পাবনায় সুচিত্রা সেনের নামাঙ্কিত মহিলা হস্টেলের নাম বদলে দিয়েছে, রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সঙ্গীত বদলে দিতে চায়, গোটা দেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি উৎখাত করে দেওয়াকেই প্রধান কর্তব্য মনে করছে, তাদের হাতে একাত্তরে স্বাধীনতা প্রাপ্ত এক নতুন আইডিয়ার বাংলাদেশ মোটেই নিরাপদ নয়। সুতরাং, সময় এবং ইতিহাসের নিয়মে, এই দুঃস্বপ্নের এক্সপেরিমেন্টের অবসান হবে। হয়তো শীঘ্রই! বদল তো হবে। কিন্তু সেটা কি আরও খারাপের দিকে গিয়ে মৌলবাদী রাষ্ট্র হবে? নাকি সুস্থিতির সুসময় ফিরবে? এ প্রশ্নের উত্তর আপাতত ভাবী কালের হাতে। নিউজ সঠিক তথ্যের অনুসন্ধানের সঠিক নিউজ দেখুন,